ইউপি সচিবকে প্রকাশ্যে চড়থাপ্পড় চেয়ারম্যানের
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
০৬-০১-২০২৫ ০৩:১৮:২৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
০৬-০১-২০২৫ ০৩:১৮:২৩ অপরাহ্ন
মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের সচিবকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খানের বিরুদ্ধে। মাসিক সভার রেজুলেশন খাতা বাড়িতে নিতে বাধা দিলে চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে তার সহযোগী খোকন হাওলাদার ইউপি সচিবকে ঘুষি মারেন। চেয়ারম্যান মারেন চড়থাপ্পড়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সহযোগী। রোববার (৫জানুয়ারি) দুপুরে বিষয়টি জানাজানি হলে টনক নড়ে প্রশাসনের। তাই অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসন।
ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব দীর্ঘ দিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদে অনুপস্থিত থাকায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হক সরদার। শনিবার দুপুরে জরুরি একটি বিষয় নিয়ে পরিষদে ইউপি সদস্যদের নিয়ে একটি সভা চলছিল। এসময় হঠাৎ ইউনিয়ন পরিষদে কিছু লোক নিয়ে আসেন চেয়ারম্যান সোহরাব।
তখন ইউপি সচিব আব্দুস সোবাহান সরদারের নিকট ‘তাকে’ ছাড়া কেন সভা করা হচ্ছে, এ বিষয় জানতে চান। এতে ইউপি সচিব চেয়ারম্যানকে সভার বিষয়বস্তু অবহিত করেন। তাতে ক্ষেপে যান চেয়ারম্যান। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদের মাসিক রেজুলেশন খাতা তার বাড়িতে নিয়ে যেতে চান। তখন সচিব তাকে বাধা দেয়।
এ কথা শুনে চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা খোকন হাওলাদার সচিবকে ঘুষি মারেন। পরে উপস্থিত লোকজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। যদিও পরে চেয়ারম্যান ও তার সহকারী সচিবের কাছে ক্ষমা চেয়ে বিদায় নেয়।
বিষয়টি জানাজানি হলে রোববার দুপুরে কার্যালয়ে এসে প্রতিবাদ জানায় ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যরা। এসময় কয়েকজন ইউপি সদস্য অভিযোগ করে জানান, দীর্ঘদিন বকেয়া থাকা স্বাক্ষর করতে বাধা দেওয়ায় ইউপি সচিবের ওপর হামলা করা হয়। এছাড়া জন্ম নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সেবার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয় জনগণের কাছ থেকে। জন্ম নিবন্ধনে ৫০ টাকার স্থলে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা নেওয়া হয়। এছাড়া ইউনিয়নে সরকারি গভীর নলকূপ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কিনে নিতে হয়।
অন্য ইউনিয়ন ও তাদের ইউনিয়নের মধ্যে যেন কোন বৈষম্য না থাকে তার দাবি জানান ইউপি সদস্যরা। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগও আছে ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব খানের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার বিকেল ৪ টার দিকে কয়েকজন লোক নিয়ে পরিষদে আসেন চেয়ারম্যান। তার সাথে থাকা খোকন হাওলাদার নামে একজন সচিবকে ঘুষি মারেন। চেয়ারম্যান কয়েকটি থাপ্পড় মারেন। পরে তারা কয়েকজন মিলে পরিবেশ শান্ত করেন। সচিবকে এভাবে লাঞ্ছিত করার উচিৎ হয়নি। এর বিচার হওয়া দরকার।’
ইউপি সদস্য মাসুদুর রহমান বলেন, ‘শুনেছি সচিবের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক। তাদের বিচার হওয়া দরকার। বিগত ৩ বছর ইউনিয়নের সব ধরনের কাজ নিজের ইচ্ছেমত করেছেন চেয়ারম্যান। তখন তার দল ক্ষমতায় ছিল করছে। এখনও কেন তার সেই আচরণের কোন পরিবর্তন হয় না।’
ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘ইউপি সচিবকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা খুব কমই ঘটেছে মাদারীপুরে। বিগত দিনে চেয়ারম্যান কাউকে তোয়াক্কা করেননি। নিজের ইচ্ছে মত করেছে। জন্ম নিবন্ধন করতে জনগণের কাছ থেকে টাকা না নিলে চেয়ারম্যান তাতে স্বাক্ষর করেন না। সরকারিভাবে আসা গভীর নলকূপে হাজার টাকায় কিনে নিতে হয়েছে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে। তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে এটাই দাবি।’
অভিযোগের বিষয় ইউপি সচিব আব্দুস সোবাহান সরদার বলেন, ‘চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা লোকজন তাকে ঘুষি মারে। চেয়ারম্যানের একটি থাপ্পরও লাগে। পরে চেয়ারম্যান ও খোকন হাওলাদার ক্ষমা চায়। যেহেতু ঘটনাটি ঘটে গেছে এবং ক্ষমা চেয়েছেন তারা। আল্লাহর দিকে চেয়ে তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি।’
অভিযোগ অস্বীকার করেন ইউপি চেয়ারম্যান সোহবার হোসেন খান বলেন, ‘অভিযোগগুলো মিথ্যা। কয়েকজন ইউপি সদস্য ষড়যন্ত্র করে এসব করাচ্ছেন। ইউপি সচিবের গায়ে হাত দেওয়ার কারণে ক্ষমা চাওয়ানো হয়েছে। আমি নিজেও ক্ষমা চেয়েছি।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোসা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স